1. admin@ihrjs-bd.org : admin :
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা
  • হট-লাইন
  • +৮৮ ০১৭৩৮ ৩২৭ ৯৩৯
  • ইমেইল
  • ihrjs2021@gmail.com
  • কেন্দ্রীয় দপ্তর
  • ১০ দিলকুশা, জীবন বীমা টাওয়ার (৯ম তলা), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০।
    হাতের সঙ্গে কলম বেঁধে বিনামূল্যে গরিবের চিকিৎসা দেন জব্বার

    দুই হাত নেই। নেই পা দুটিও। তবে এই প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি জব্বার হাওলাদারকে। পঙ্গু হাতে কলম বেঁধে চিকিৎসাপত্র লেখেন। পল্লী চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি একজন ওষুধের ফার্মেসি ব্যবসায়ী। গরিবের চিকিৎসা দেন বিনামূল্যে। এভাবেই এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে জব্বারের জীবনযুদ্ধ।

    ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের কররা গ্রামের বাসিন্দা জব্বার হাওলাদার। বাবা ময়েজ হাওলাদের ৪ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে জব্বার সবার বড়। স্থানীয় শিমুল বাজারে তার হাওলাদার ফার্মেসি ও রোগী দেখার চেম্বার। তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এখন স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার।

    পঙ্গু জীবনে পথচলার একমাত্র সাহায্যকারী জব্বার হাওলাদারের স্ত্রী হেলেনা বেগম। চলাচল, নাওয়া-খাওয়া ও দৈনন্দিন কাজ থেকে শুরু করে সংসার চালানো, স্বামীকে সাহায্য করা, ওষুধের ব্যবসা, রোগীদের প্রেসার মাপাসহ সবই সমানতালে সামাল দেন স্ত্রী হেলেনা বেগম।

    জব্বার হাওলাদারের বর্তমান বয়স প্রায় ৫৬ বছর। অভাব অনটন আর শারীরিক অসুস্থতার কারণে বেশি লেখাপড়া করা হয়নি। ১৯৮৫ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৬ বছর বয়সে বাম পায়ের বৃদ্ধ আঙুলে হঠাৎ ঘাঁ দেখা দেয়। সেই থেকে শুরু। গ্যাংরিন আক্রান্ত হয়ে প্রথমে কাটা পড়ে আঙুলটি। এরপর হাঁটু পর্যন্ত এক পা, এক হাত। একে একে দুই হাত আর দুই পা-ই কেটে ফেলতে হয়। এভাবে প্রায় ২৩ বার তার শরীরে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।

    তিনি ঢাকার মিটফোর্ডে সাত মাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় যাত্রাবাড়ীতে পল্লী চিকিৎসক কোর্চে ভর্তি হয়ে এলএমএফ পাস করেন। এলাকায় ফিরে এসে রোকন উদ্দিনের ফার্মেসিতে কাজের পাশাপাশি পল্লী চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ নেন।

    এলএমএএফ ও ভিডিআরএমএফ (পল্লী চিকিৎসক কোর্চ) কোর্চ সম্পন্ন করেন জব্বার হাওলাদার। এরপর তিনি রোকন উদ্দিনের পুরাতন ড্রাগ লাইসেন্স কিনে নিয়ম অনুযায়ী তার নামে এফিডেভিট করে শুরু করেন ফার্মেসি ব্যবসা ও পল্লী চিকিৎসকের কাজ। এভাবে তিনি প্রায় একযুগ ধরে এ পেশায় আছেন।

    জব্বার হাওলাদার বলেন, কেউ কেউ অদম্য সাহস নিয়ে দুর্বার গতিতে সামনে এগিয়ে চলে সব ধরনের বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে। একজনের জীবনে যত কালো অতীত কিংবা খুঁতই থাকুক না কেন, বাধা ডিঙিয়ে যারা চলতে থাকে তারা সফলতার দ্বারে পৌঁছাবেই।

    তিনি বলেন, আমি কারো করুণা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। সৃষ্টিকর্তা যেমন চেয়েছেন আমি তেমন আছি। এ নিয়ে আমার কোন দুঃখ-কষ্ট নেই। তবে আমার জীবনযুদ্ধের একমাত্র সাহায্যকারী আমার স্ত্রী, যার সহযোগিতা ছাড়া এসব সম্ভব হতো না।

    তিনি শুধুমাত্র একটি প্রতিবন্ধী ভাতা পান জানিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, প্রতিহিংসার শিকার হয়ে প্রায় দেড় বছর ধরে প্রতিবন্ধী ভাতার অর্থও বঞ্চিত ছিলাম। এছাড়া সরকারি বেসরকারি কোনো ধরনের সুযোগ সুবিধা পাই না। জীবনের বাকিটা সময় মানুষের সেবা করে এভাবেই কাটাতে চান অদম্য জীবনযোদ্ধা জব্বার হাওলাদার।

    জব্বার হাওলাদারের স্ত্রী হেলেনা বেগম বলেন, প্রায় ৩০ বছর তার সঙ্গে সংসার করছি। শারীরিক অসুস্থতা জেনেই তার সঙ্গে বিয়ে হয়। তিনি একজন ভালো মানুষ। তাই সুখে-দুঃখে একসঙ্গে পথ চলছি।

    তিনি আরও বলেন, অন্য একজনের ড্রাগ লাইসেন্স কিনে এফিডেভিট করে নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে ফার্মেসি ব্যবসা চলছে। কিন্তু এফিডেভিট নয়, আমাদের চাওয়া পুরনো ড্রাগ লাইসেন্সটিই আমাদের নামে নতুন করে করার সহযোগিতা ও ব্যবস্থা করলে উপকৃত হবো।

    স্থানীয় শিমুল বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জব্বার হাওলাদার একজন অদম্য সংগ্রামী মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আমাদের পারিবারিক চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে প্রাথমিকভাবে তার চিকিৎসা ও ওষুধপত্র নেওয়া হয়। এ ছাড়াও তিনি গরিব অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ওষুধপত্রও দিয়ে থাকেন।

    এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিনি একজন বৈধ প্রতিবন্ধী ভাতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। নিয়মিত ভাতাও পাচ্ছেন। আমাদের জায়গা থেকে আসলে এর বেশিকিছু করার নেই। আমাদের আর কোনো ফান্ড নেই। সরকার আমাদের দুই ধরনের ফান্ড দিয়ে থাকন। তা হচ্ছে- প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান আর চিকিৎসার জন্য চিকিৎসা ফান্ড। দুইটির মধ্যে তার যেটা দরকার তা তিনি পাচ্ছেন।

    এ ব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মহাসিন ফকির বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ হয়েও তিনি একজন পরিশ্রমী অদম্য জীবনযোদ্ধা। তার মঙ্গল কামনা করা ছাড়া তেমন কোনো কিছু করার নেই। তারপরও এমন একজন মানুষের জন্য আমাদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

    এ প্রসঙ্গে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিম উদ্দিন বলেন, তার যদি কোনো সমস্যা দূর করার জন্য আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজন মনে করেন তাহলে অবশ্যই সহযোগিতা করা হবে। তারপরও জব্বার হাওলাদারের জীবনযাত্রা সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। একদিন সময় করে সরেজমিনে তাকে দেখতে যাবো। তার কোনো কিছু প্রয়োজন কিংবা সমস্যা থাকলে সমাধানের পাশাপাশি তাকে আরো সাবলম্বী হতে চেষ্টা করা হবে।

    ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জব্বারের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তার ড্রাগ লাইসেন্স সংক্রান্ত কোনো সমস্যা বা জটিলতা থাকলে আমাদের অফিসে যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।

    সূত্র: জাগো নিউজ

    50+

    প্রজেক্ট

    6+

    বিভিন্ন বিভাগ

    500+

    কমিটি

    1700+

    সদস্য