রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী সাইদুল ইসলামের ছেলে আব্দুল কাদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে মেধাবী এ শিক্ষার্থীর।
বিষয়টি নজরে এলে তার পাশে দাঁড়ান মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমাতুজ জোহরা। সাইদুলকে ভর্তির জন্য ব্যক্তিগতভাবে নগদ ২০ হাজার টাকা দেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আব্দুল কাদের উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়নের সাইদুল ইসলামের ছেলে। তিন ভাই বোনের মধ্যে কাদের দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই কাদের ছিলেন মেধাবী। স্থানীয় কুমরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ২০২০ সালে কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পান। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৫২২তম হয়ে ‘ইংরেজি ভাষা’ বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পান।
নাইদুলের বাবা সাইদুল ইসলাম প্রতিবন্ধী। তিনি অতিকষ্টে ধারদেনা করে কাদেরের পড়াশোনার খরচ বহন করেছেন। কিন্তু কয়েক বছর আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ধারদেনা করে কোনোরকম সংসার চললেও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে পারছিলেন না।
পরিবারের অভাব অনটনে কাদের এসএসসি পরীক্ষা পাস করার পর থেকে নিজের পড়াশোনা চালাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনি করাতে শুরু করেন। প্রতিদিন একটি ভাঙা সাইকেল নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে টিউশনি করিয়ে লেখাপড়া করে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে থাকেন। মেধার যোগ্যতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তির সুযোগ পান। কিন্তু তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। এতে কাদেরের স্বপ্ন ভেঙে পড়তে শুরু করে। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি।
বিষয়টি জানতে পারেন মিঠাপুকুরের ইউএনও ফাতেমাতুজ জোহরা। তিনি তাকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে তার হাতে নগদ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন। ভবিষ্যতে যে কোনো সমস্যা হলে যোগাযোগ করার জন্য বলেন ইউএনও।
এ বিষয়ে ইউএনও ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, কাদের নামের ওই মেধাবী শিক্ষার্থী নিজে কষ্ট করে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এটা অনেক গর্বের। যখন জানতে পারলাম সে অর্থের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না, তখন আমি ব্যক্তিগতভাবে তার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছি। আমি তার মঙ্গল কামনা করি। সে যেন পড়াশোনা করে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।
এ বিষয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কাদের বলেন, ভর্তির সুযোগ পেয়েও অর্থকষ্টে ভেঙে পড়েছিলাম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমার এ দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। তার এ অবদান মনে রাখবো। পড়ালেখা শেষ করে যেন দেশ ও সমাজের কল্যাণে কিছু করতে পারি এজন্য সবার দোয়া কামনা করছি।
সূত্র: জাগো নিউজ